আপনি মা হচ্ছেন!



প্রত্যেক গর্ভবতী মা-ই নয় মাসের সুস্থ-স্বাভাবিক গর্ভাবস্থা প্রত্যাশা করেন। সুস্থ গর্ভাবস্থা মানে সুস্থ মা ও সুস্থ শিশু। এ জন্য গর্ভাবস্থায় কিছু নিয়ম মেনে চলা অবশ্যই প্রয়োজন।

গর্ভাবস্থায় নিন স্বাস্থ্যসেবা
মা ও শিশুর সুস্থতার জন্য গর্ভবতী মায়ের ‘প্রসবপূর্ব যত্ন’ করাতে হবে নিয়মিত। এ জন্য আদর্শ হচ্ছে, গর্ভাবস্থায় মোট ১৪ বার যেতে হবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, নার্স বা অন্য কোনো অভিজ্ঞ স্বাস্থ্যকর্মীর কাছে। প্রথম সাত মাসে প্রতি মাসে একবার করে মোট সাতবার (প্রতি চার সপ্তাহে একবার), অষ্টম মাসে প্রতি দুই সপ্তাহে একবার করে মোট দুবার এবং পরে সন্তান প্রসব হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত প্রতি সপ্তাহে একবার করে মোট পাঁচবার (সর্বমোট এই ১৪ বার যাওয়াটা আদর্শ)। কিন্তু এটা অনেক সময়ই সম্ভব হয়ে ওঠে না। যদি তা সম্ভব না হয়, তা হলে কমপক্ষে তিনবার যেতেই হবে। প্রথম ২০ সপ্তাহের মধ্যে একবার, ৩২ সপ্তাহের সময় একবার এবং ৩৬ সপ্তাহের সময় একবার।

গর্ভবতী মায়ের ইতিহাস
চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীকে শেষ মাসিকের ইতিহাস জানাতে হবে। শেষ মাসিকের তারিখ থেকেই তাঁরা সন্তান হওয়ার সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করেন। পূর্ববর্তী গর্ভাবস্থা বা প্রসবকালীন ইতিহাসও বলতে হবে। সে হিসেবে স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসব হবে, না কোনো অপারেশনের প্রয়োজন পড়বে; হাসপাতালে হবে, না বাড়িতে হবে, তার সিদ্ধান্ত নেবেন চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মী। ধনুষ্টংকারের টিকা নেওয়া আছে কি না, সে খবরও দিতে হবে। টিকা না নিয়ে থাকলে নিতে হবে।

স্বাস্থ্য পরীক্ষা
শরীরের উচ্চতা ও ওজন ঠিক আছে কি না, রক্তশূন্যতা আছে কি না, উচ্চ রক্তচাপ আছে কি না—এসবই দেখা হয় ‘প্রসবপূর্ব যত্ন’তে। হাতে, পায়ে বা শরীরের অন্যান্য স্থানে পানি এসেছে কি না (প্রি-এক্লাম্পশিয়া), তা-ও পরীক্ষা করে দেখা হয় গর্ভাবস্থায়।

ল্যাবরেটরি পরীক্ষা
রক্তের গ্রুপ জেনে রাখা জরুরি। সিফিলিস, ডায়াবেটিস আছে কি না, তা আগেভাগেই পরীক্ষা করিয়ে নিলে সময়মতো চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয়। গর্ভের ভ্রূণ ঠিকমতো বাড়ছে কি না, ভ্রূণের কোনো শারীরিক ত্রুটি আছে কি না, জরায়ুর ভেতর পানির পরিমাণ ঠিক আছে কি না, জরায়ুর ভেতর ফুলের অবস্থান কোথায়, এর অবস্থাই বা কেমন ইত্যাদি দেখার জন্য আলট্রাসনোগ্রাফি করাতে হয়।

উপদেশ
খাবার হোক স্বাস্থ্যকর
খাবারে থাকতে হবে একটু বাড়তি ক্যালরি। গর্ভের সন্তানের জন্য বাড়তি খাবার। কোষ্ঠকাঠিন্য যেন না হয়, সে জন্য খাবারে থাকতে হবে পর্যাপ্ত আঁশ। খাবারের আঁশ ডায়াবেটিসও প্রতিরোধ করবে। খাবারে থাকতে হবে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ লবণ। শাকসবজি, ফল-মূলে পাওয়া যাবে এগুলো। মাছ খাওয়া ভালো। মাছে আছে ওমেগা ৩ মেদাম্ল, যা শিশুর বিকাশে সহায়ক। যথেষ্ট পানিও পান করতে হবে প্রতিদিন।
বিশ্রাম নিন পরিমিত
একেবারে শুয়ে-বসে থাকাও নয়, আবার দিনভর হাড়ভাঙা খাটুনিও নয়। কাজের ফাঁকে চাই পর্যাপ্ত বিশ্রাম।
ব্যায়াম করুন নিয়মিত
দৈনন্দিন গৃহস্থালির কাজ চালিয়ে যেতে হবে স্বাভাবিকভাবেই। প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ মিনিট সময় হাঁটতে হবে। সপ্তাহে পাঁচ দিন কমপক্ষে।
ঘুম হতে হবে পর্যাপ্ত
দিনে রাতে সাত-আট ঘণ্টা। দুপুরে খাওয়ার পর হালকা ঘুম।
পোশাক হোক আরামদায়ক
সুতির ঢিলেঢালা পোশাকে ত্বক ও শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে রক্ত সরবরাহ থাকবে স্বাভাবিক। হাই হিল জুতো স্বাস্থ্যকর নয়। ফ্ল্যাট চটি ভালো। মেরুদণ্ডের স্বাভাবিক বক্রতা বজায় থাকবে। পিঠে, কোমরে ও পায়ের পেশিতে ব্যথা করবে না।
এড়িয়ে চলুন সিগারেটের ধোঁয়া
গর্ভাবস্থায় ধূমপান করলে গর্ভের সন্তান কম ওজনের হয়। পরোক্ষ ধূমপানেও একই ক্ষতি হয়। সুতরাং প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ধূমপান এড়িয়ে চলতে হবে।
পরিহার করুন প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ
ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় গর্ভের সন্তানের শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি হতে পারে। তাই রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া কোনো ওষুধ সেবন করা যাবে না।

একটু-আধটু সমস্যা হলে ব্যবস্থা নিন নিজেই
বমি বমি ভাব বা বমি
বিশেষ করে, গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাস দিনের শুরুতে বমি বমি ভাব হয় বা বমি হয়। এ সমস্যা হলে অল্প অল্প করে ঘন ঘন খাবার খেতে হবে। সকালে ঘুম থেকে উঠেই বিস্কুট, টোস্ট-জাতীয় শুকনো কিছু খাবার খেলেও উপকার পাওয়া যায়। তৈলাক্ত খাবার কম খেলেও উপকার পাওয়া যাবে। বমি খুব বেশি হলে বা সমস্যাটা তিন মাসের বেশি স্থায়ী হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

বুক জ্বালা
গর্ভকালীন এসিডিটির জন্যও এ সমস্যাটা হতে পারে। এসিডিটি বা বুক জ্বালা হলেও অল্প অল্প করে ঘন ঘন খাবার খেতে হবে। তৈলাক্ত খাবার, ভাজা-পোড়া খাবার ও বেশি মসলাযুক্ত খাবার কম খেতে হবে। একসঙ্গে বেশি খাবার না খেলেও উপকার পাওয়া যায়। খাওয়ার সময় পানি কম পান করতে হবে। দুই খাবারের মধ্যবর্তী সময়ে বেশি বেশি পানি পান করতে হবে। খাওয়ার পরপরই উপুড় হওয়া বা বিছানায় শোয়া উচিত নয়। চিকিৎসকের পরামর্শমতো অ্যান্টাসিড-জাতীয় ওষুধ সেবন করা যেতে পারে।

কোষ্ঠকাঠিন্য
গর্ভকালীন কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্য যেন না হয়, সে জন্য প্রচুর পানি পান করতে হবে। দৈনিক অন্তত আট গ্লাস। আঁশ আছে এ রকম খাবার, যেমন—শাকসবজি, ফলমূল, বিচি-জাতীয় খাবার, ডাল, গমের আটা ইত্যাদি খেতে হবে বেশি বেশি। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া পায়খানা নরম করার জন্য কোনো ওষুধ ব্যবহার করা যাবে না।

0 comments:

Post a Comment

Blog Archive

Recent Posts

Categories

Unordered List

Sample Text

Pages